আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য তার এবাদত করাকে ফরজ করেছেন।আল্লাহ তায়ালা জিন এবং মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাহার এবাদত করার জন্য। ফরজ এবাদতের পাশাপাশি সুন্নত নফল এবাদত ও আছে।
ফরজ সুন্নত আদায়ের পর যতো বেশি নফল আমল করা যায় ততো আল্লাহর নিকট প্রিয় হওয়া যায়।নফল এবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম হলো কুরআন তেলাওয়াত করা তারপর মানুষকে দান সাদকা করা, নামাজ পড়া। নামাজর মধ্যে আবার সর্বোত্তম হলো তাহাজ্জুদ নামাজ, ইশরাকের নামাজ, চাশতের নামাজ, আওয়াবিন নামাজ। কিছু নফল রোজা আছে,যেমন শবে বরাতের রোজাশবে বরাতের রোজা, শবে কদরের রোজা। এ সমস্ত আমল করে আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয় হওয়া যায়।
দোহা বা চাশতের নামাজ সূর্যোদয়ের আড়াই ঘন্টা পর হইতে সূর্যস্থির হওয়ার পূর্ব্ব পর্যন্ত পড়া যায়। ইহাকে ফারসী ভাষায় চাশতের নামাজ বলে। এই নামাজে প্রথম দুই রাকাতের প্রথম রাকাতে সূরা শাম্ছ’ (ওশ্শাম্ছি অ দোহাহা) এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ‘দোহা‘ ( الضحى ,ওয়াদ্দোহা) একবার পড়িবে। পরের দুই রাকাতও এই নিয়মে পড়িবে। নামাজের নিয়ত, ফজিলত এবং নিয়ম জানতে মনোযোগ দিয়ে পুরোটি পড়ুন।
চাশতের নামাজ
চাশতের নামাজের নিয়তটি দেওয়া হল
একটা কথা মনে রাখবেন, নিয়ত বাংলা এবং আরবীতে করা যায়। অনেকে বলে নিয়ত না করলেও চলে, মনে মনেতো ভাবছেন নামাজ পড়বেন।তাহাদের বলি মনে মনেতো আল্লাহকে সবি বলি, সুতরাং দরকার নাই আলাদা করে নামাজ পড়ে রাতের গভীরে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করার।
আরবীতে নিয়তটি হলোঃ
চাশতের নামাজের নিয়ত বাঃ উঃ— নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহে তায়ালা রাকয়াতাই ছালাতিদ্দোহা সুন্নাতু রাছুলিল্লাহে তায়ালা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আকবর।
চাশতের নামাজের নিয়ত বাংলায় যেভাবে করবেনঃ
আমি কেবলা মুখি হয়ে দুই রাকাআত চাশতের নামাজের নিয়ত করছি-আল্লাহু আকবার।
চাশতের নামাজের নিয়ম
দোহা বা চাশতের নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা ‘আ’লা’ (ছাব্বিহিছমা রাব্বিকা) একবার, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ‘শামছ’ (ওয়াশ্শাম্ছি ওয়া দোহাহা) একবার, তৃতীয় রাকাতে সূরা ‘লাইল’ (ওয়াল্লাইলি ইযা ইয়াগশা) একবার, চতুর্থ রাকাতে সুরা ‘ওয়াদ্দোহা একবার পড়িবে।
- তায়াম্মুম কখন করতে হয় এবং কিভাবে করে
- ফরয গোসলের নিয়ম ও কালিমায়ে তামজীদ
- তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত এবং তাহাজ্জুত নামাজের নিয়ম
চাশতের নামাজের ফজিলত
চাশতের নামাজের ফজিলত দোহা বা চাশতের নামাজ পড়িলে বেহেশতে সোনার মহল তৈয়ার হইবে এবং দরিদ্রতা দূর হইবে ও সমূদ্রের ফেনা সমতুল্য গুনাহ্ মাফ হইবে।
হাদীছ শরীফে আছে, “আল্লাহ্ তায়ালা অতি কৌশলে তিনশত ষাটটি জোড়ার সহিত বনী আদমকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তজ্জন্য প্রত্যেকেরই উক্ত জোড়া সমূহের ছদকা আদায় করণার্থে দৈনিক কমপক্ষে তিনশত ষাট বার তছবীহ পাঠ করা অথবা চারি রাকাত দোহার নামাজ পড়িয়া উহার ছক্কা আদায় করা কর্তব্য।” দোহার নামাজের সালাম ফিরাইয়া একবার আয়াতুল কুরছীচ এবং ‘আমানার্ রাসূলু’) হইতে (‘ফাংচুরনা আ’লাল্ কওমিল্ কাফিরীন’) পর্য্যস্ত একবার পড়িবে।
তারপর (‘কুলিল্লাহুম্মা মালিকাল্ মুলকে’ )হইতে (“ওয়াতারযুকু মান, তাশাউ বিগাইরি হিছাব” ) পর্য্যন্ত তিনবার পড়িবে। তৎপর আয়াতে কুতুব একবার এবং দরূদ শরীফ একুশবার পড়িয়া নীচের মুনাজাত করিবে।মোনাজাত আপনি নিজের মতো করাই উত্তম। নিজের মতো করে আল্লাহর কাছে চাইবেন। বাংলায় চান আরবীতে। নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে চাইবেন।
মুনাজাত বাঃ উঃ- আল্হামদু লিল্লাহে রাব্বিল আলামীন। ওয়াচ্ছালাতু ওয়াহ্ ছালামু আলা রাছুলিহিল্ কারীম। আল্লাহুম্মাফিলী ওয়ার্হাম্নী ওয়ার্নী ওয়া তুব্ আলাইয়্যা ইন্নাকা আতাত্ তাওয়্যাবুর্ রাহীম।
মুনাজাত অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য, যিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের প্রভু। আর তাঁহার সম্মানিত রাছুলের প্রতি রহমত ও সালাম অবতীর্ণ হউক; হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা কর এবং আমাকে দয়া কর এবং রিযিক দান কর এবং আমার তওবা কবুল কর। বস্তুতঃ তুমিই বহু তওবা কবুলকারী মহান দয়ালু। তারপর তিনবার পড়িবে –
اللهم ارزقنا حلالا طيبا واسعاہ
আল্লাহুম্মার বাঃ উঃ– আল্লাহুম্মার যুকনা হালালান্ তাইয়্যোবাওঁ ওছিআ ।
অর্থঃ হে আল্লাহ্! আমাদিগকে হালাল পবিত্র প্রচুর রিজিক দান কর।
তারপর দোয়াটি
বাঃ উঃ- রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আনতাছ ছামীউল আলীম। ওয়া ছাল্লাল্লাহু তায়ালা আলা খাইরী খালক্বিহী ওয়া নূরে আরশিহী ছাইয়্যেদিনা মুহাম্মাদিও ওয়া আলিহী ওয়া আছহাবিহী আজমাঈন। বি-ফাদলে সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইযযাতে আম্মা-ইয়াছিফুন। ওয়া সালামুন আলাল মুরছালীনা ওয়াল্ হামদু লিল্লাহে রাব্বিল আলামীন। বি-হাকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাছুলুল্লাহ্।
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদের থেকে (আমাদের নেক আমল সমূহ) কবুল কর। নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
আর আল্লাহ্ তায়ালা তাঁহার সৃষ্টির সেরা এবং তাঁহার আরশের নূর ছাইয়্যেদিনা হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া ছাল্লাম, তাঁহার বংশধর ও তাঁহার সকল সাহাবীগণের উপর রহমত বর্ষণ করুক।
(হে রাছুল) “তাহারা (কাফেরেরা) যাহা বলে ঐ সকল (দোষ) হইতে তোমার প্রতিপালক, মৰ্য্যাদাশীল প্রতিপালক, পবিত্র। এবং রসুলগণের প্রতি সালাম। এবং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালারই জন্য, যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের প্রতিপালক।” এই বাক্যসমূহের বরকতে। “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর্ রাছুলুল্লাহ্” এই কলেমার উছীলায়। পড়িয়া মুনাজাত শেষ করিবে। শুক্রবার দিনের ইব্রাক্ব ও দোহার নামাজের ফযিলত অন্যান্য দিন হইতে বেশী। এই দিন বেশী করিয়া নফল নামাজ পড়িলে বেশুমার ছওয়াব হয়।
প্রশ্নঃচাশতের নামাজ কয় রাকাআত করে পড়তে হয়?
উত্তরঃদুই রাকাআত করে চাশতের নামাজ পড়বেন।
প্রশ্নঃ চাশতের নামাজের সময় কখন?
উত্তরঃচাশতের নামাজ সূর্যোদয়ের আড়াই ঘন্টা পর হইতে সূর্যস্থির হওয়ার পূর্ব্ব পর্যন্ত পড়া যায়।